নিজস্ব প্রতিবেদক যমুনাপ্রবাহ.কম
আজ সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চুড়ান্ত মুহুর্তে আজকের দিনে হানাদার মুক্ত হয় তৎকালিন মহুকুমা শহর সিরাজগঞ্জ। এর আগে ডিসেম্বরের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে অন্য উপজেলাগুলো হানাদার মুক্ত হয়।
একাত্তরের এইদিনে প্রিয় শহরের দখল নেয়ার পর শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা-জনতার উল্লাস। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দলে দলে শহরে প্রবেশ করতে থাকে হাজারও কৃষক-শ্রমিক-জনতা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে যমুনা পাড়ের এ শহরটি।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ৭১’র ২৬ মার্চ থেকে সিরাজগঞ্জ মহুকুমা হানাদার থাকলেও এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানি বাহিনী সিরাজগঞ্জে প্রবেশ করে। সেই সময় বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেও ব্যর্থ হন মুক্তিযোদ্ধারা। সিরাজগঞ্জ দখলে নেয় পাকসেনারা। এরপর থেকে একে একে সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাস্ত হতে থাকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। বড়ইতলী, বাগবাটি, ব্রহ্মগাছা, নওগা, বারুহাস, কৈগাড়ি ও ভদ্রঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিপুলসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়।
চুড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মুহুর্তে প্রিয় শহরকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ৯ ডিসেম্বর বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহরের উত্তরে শৈলাবাড়ী পাকিস্তানী ক্যাম্পে হামলা করে। সেদিন পাকসেনাদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকতে না পেরে পিছু হটেন মুক্তিযোদ্ধার। ওই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শহীদ হন।১০ ডিসেম্বর বিশ্রাম নেয়ার পর ১১ ও ১২ ডিসেম্বর দফায় দফায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনদিক থেকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকসেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা। পূর্বদিক থেকে ইসহাক আলী ও মোজাম্মেল হক, পশ্চিমে সোহরাব আলী সরকার ও লুৎফর রহমান দুদু এবং উত্তরে আমির হোসেন ভুলু ও জহুরুল ইসলামের নেতৃত্বে আক্রমণ চালানো হয়। এছাড়াও দক্ষিণ দিকে আজিজ সরকার ও ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ ব্যুহ গড়ে তোলা হয়। এদিন রাত তিনটা পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ হয়। অবেশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে টিকতে না পেরে ট্রেনযোগে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায় পাক সেনারা। যুদ্ধে শহীদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব, সুলতান মাহমুদসহ পাঁচজন।
১৪ ডিসেম্বর সকালে মিত্র বাহিনীর বিমান সিরাজগঞ্জ জেলার ওপর টহল দেয়। পরিত্যক্ত শত্রুশিবির লক্ষ্য করে বিমান থেকে গুলি ছোড়া হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে। ওয়াপদা অফিসে পাকবাহিনীর প্রধান ক্যাম্পও দখলে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। শহরের বিএ কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে দিয়ে ওড়ানো হয় বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত জাতীয় পতাকা। মহুকুমা প্রশাসকের কার্যালয়, কওমীজুটমিলসহ সকল সরকারি-বেরসকারি প্রতিষ্ঠানে উড়িয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের পতাকা। মুক্ত সিরাজগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় ইসমাইল হোসেনকে এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় আমির হোসেন ভুলুকে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের চীফ-ইন-কমান্ড (সিএনসি) ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার সোহরাব আলী সরকার বলেন, সেদিন যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এক কাতারে সংগঠিত করেছেন তাদের মধ্যে প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, শহীদ মহুকুমা প্রশাসক শামসুদ্দিন, পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক মরহুম প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা (সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা), আমিনুল ইসলাম চৌধুরী (সাংবাদিক, প্রয়াত আবু মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া (সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান), মরহুম লুৎফর রহমান অরুন, জহুরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন শেখ, ইসহাক আলী, আব্দুল হাই তালুকদার, বিমল কুমার দাস প্রমূখ অন্যতম।
জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান বলেন, সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আবার চেষ্টা করুন
পূণ: নির্বাচনে নিহত কাউন্সিলর তরিকুলের স্ত্রীর বিপুল বিজয়
নিজস্ব প্রতিবেদক যমুনাপ্রবাহ.কম সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নিহত ৬ নং ওয়ার্ডের পূণ: নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত …