নিজস্ব প্রতিবেদক যমুনাপ্রবাহ.কম
কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবার ইলেট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ নির্বাচনী এলাকার ভোটারগণ। এ পদ্মতিতে সন্তুষ্ট প্রার্থীরাও। তবে সরকারদলী কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সরেজমিনে এ নির্বাচনী এলাকার বেরিপোটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গান্ধাইল-রতনকান্দি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, উদগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, সড়াতৈল শ্যামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহুলী ইউনিয়ন পরিষদ, আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় ভোটার ও ভোট সংশ্লিষ্টদের সাথে।
তারা বলেন, ইভিএম পদ্মতিতে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করছেন ভোটাররা। এখানে অন্যের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই-এটা একটি ভাল দিক। তবে আঙুলের ছাপের সমস্যার কারণে বৃদ্ধ ব্যক্তিরা কিছুটা বিপাকে পড়ছেন। অবশ্য প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে বিশেষজ্ঞ সেটা সমাধান করছেন। ইভিএম মেশিনে কোন সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞরা সেটার তাতক্ষণিক সমাধান করেছেন।
কথা হয়, বেরিপোটল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা জিয়া স্বাধীনের সাথে-তিনি বলেন, ইভিএম অত্যন্ত আধুনিক পদ্মতি। এখানে ভোট দিতে কোন ভোটারের কোন সমস্যা হচ্ছে না। নিজের ভোট আমরা নিজেরাই দিতে পারছি। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সত্তর্ধো বয়সী মইতন বেওয়া বলেন, জীবনে কুনদিন সুইচ টিপ্যা ভোট দেই নাই। ওই পাকিস্তান আমল থাইক্যা আমরা কাগজে সিল দিয়্যা ভোট দিচি। আইজক্যা ভোট দিল্যাম কাগজ লাগলো না, সিলও লাগলো না। সুইচে টিপ দিল্যাম আর ভোট অইয়্যা গেল।
একই কেন্দ্রের ভোটার টুবুলি বেগম, জহুরুল ইসলাম, উদগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার সোহরাব আলী, গান্ধাইল-রতনকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার আবুল কাশেম, জুব্বার আলীসহ অনেকেই বলেন, ইভিএমে ভোট দেয়া ঝামেলা অনেক কম। ব্যালট পেপার কাটা, নম্বর মিলানো, আবার বুথের মধ্যে গিয়ে সিল মারা-কত ঝক্কি। ইভিএমে ওই ঝামেলটা নাই। আমরা দু মিনিটেই ভোট দিতে পেরেছি। এটা খুব ভাল লাগছে।
এদিকে আঙুলের ছাপ না মেলায় ও পোলিং অফিসারদের অজ্ঞতার কারণেও কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে। ছাপ না মেলায় অনেক ফিরে যেতে হয়েছে। সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের সড়াতৈল শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মেহেদী পারভেজ বলেন, ইভিএম পদ্মতি বুঝতে পারলে অত্যন্ত সহজেই ভোটগ্রহণ করা যায়। আমরা প্রথমবার ইভিএমে ভোট নিয়েছি এবং সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এ কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৪শ ৩৩ ভোটের মধ্যে ১৫শ ৬৩ ভোট পড়েছে। এখানে শতকরা প্রায় ৬৩ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।
বেরিপোটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোফাখ্খারুল ইসলাম বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে খুব সহজেই ভোটগ্রহণ করা যায়। তবে অনেক সময় আঙুলের ছাপ না মেলায় বয়স্কদের ভোটগ্রহণে দেরি হলেও ইভিএম বিশেষজ্ঞরা সেটা সমাধান করছেন। খুব বেশি সমস্যা হলে উপজেলা নির্বাচন অফিসেও লোক রয়েছেন। ফুলকোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রেজাউল করিম জানান, ইভিএম পদ্মতি অত্যন্ত সুন্দর। ভোটাররা খুব সহজেই ভোট দিতে পারে, সময়ও কম লাগে। এদিকে বিএনপি প্রার্থী সেলিম রেজা ইভিএম পদ্মতির সরাসরি বিরোধীতা না করে বলেন, বুথের মধ্যে ভোটার ছাড়াও দলীয় নেতারা উপস্থিত থেকে ভোটকে প্রভাবিত করেছেন। তবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী তানভীর শাকিল জয় এ পদ্মতির প্রশংসা করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে এ আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে ইভিএম পদ্মতি নিয়ে কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরেছে। তিনি বলেন, ভোট গণনা শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সব মিলিয়ে গড়ে ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৪। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ১৭১টি কেন্দ্রে একযোগে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।